মাতৃভাষা শুধু মুখের ভাষা নয়, আমাদের অস্তিত্বের ভাষা; গোয়াইনঘাটে একুশের মঞ্চ থেকে
1 min read
আবু তালহা তোফায়েল :: ২১শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মহান মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্বাহী অফিসার নাজমুস সাকিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় “একুশের মঞ্চ” অনুষ্ঠান।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জননেতা মোহাম্মদ ফারুক আহমেদ বলেন- মানুষ প্রতিমুহূর্তের স্পন্দন ও প্রবাহের মধ্য দিয়ে তার জীবিত ও জাগর সত্ত্বাটাকে অস্তিত্বময় করে রাখে। আর তার অস্তিত্ব, অবস্থান, গতি-প্রকৃতি ও শক্তির অন্বয় রচনা করে।
অস্তিত্বের জন্য, মনুষ্যত্ব ও মানবিক অর্জনের জন্য তার ভাষা ব্যবহার করে। ভাষার চালিত শক্তির প্রয়োগে তার দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন সঞ্চালিত হয়, মস্তিষ্ক কোটর, স্মৃতিকোষ, চেতনা- চৈতন্য, অনুভূতি ও উপলব্ধি তেমনি ক্রিয়াশীল হতে থাকে।
ব্যক্তিসত্ত্বা ভাষার মাধ্যমে জাগরিত হয়-বিকশিত হয়। একটি জাতির সত্ত্বাও প্রথমত এবং শেষত ভাষার মাধ্যমে বিকশিত হতে থাকে। ভাষা মানুষের অস্তিত্বকে ধারণ করে এবং স্পন্দমান করে। বিশ্বাসকে বাক্সময় ও বিভাসিত করে। আন্ত:সলিলার মত বয়ে যেতে থাকে অন্তর্লোকের সমস্ত অন্দর-কন্দর পেরিয়ে। আমরা আমাদের মায়ের হৃদয়ের স্পন্দন শুনি এই ভাষায়। আমাদের ঘুম নেমে আসে মাতৃভাষারক ছন্দে। মাতৃভাষার আদরে নেমে আসে রাতের নিরালা। ভোরের নরম আলো জ্বলে ওঠে আমাদের মাতৃভাষার সৌন্দর্যে। এখনো এই সুন্দরই আমাদেরকে তৃপ্ত করে। সুতরাং মাতৃভাষা আমাদের মুখের ভাষা নয়, আমাদের অস্তিত্বের ভাষা।
সভাপতির বক্তব্যে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুস সাকিব বলেন- মাতৃভাষাকে বাদ দিলে আমাদের পরিচয় গৌণ হয়ে যায়। শেকড় ছিন্ন বৃক্ষের মতো দুর্বল হয়ে যায়। মাতৃভাষার জন্যই প্রতিটি জাতি সর্বদা বদ্ধপরিকর। মাভৃভাষাকে আঁকড়ে ধরেই তাদের পথচলা। মানুষের ভাষাকে কোনোভাবেই অবরুদ্ধ করা যায় না। ভাষাকে ধ্বংস করাও সম্ভবপর নয়।
একুশে ফেব্রুয়ারি
একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে এক গৌরব, আত্মত্যাগ ও চেতনার নাম।
বাঙালির কাছে একুশে ফেব্রুয়ারি শুধুমাত্র দিনপঞ্জীর একটি জ্বলজ্বলে লাল তারিখ নয়, একুশ বাঙালির কাছে খাপ খোলা এক ঝকঝকে ধারালো তলোয়ার।
১৯৫২ সালের এই দিনে (৮ ফালগুন, ১৩৫৯) বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর ঢাকা মেডিকেলের আম্রপ্রাঙ্গণে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এতে সালাম, বরকত, রফিকসহ কয়েকজন নিহত হন।
তারপর পেরিয়ে গেছে বহু বসন্ত। একুশের পথ বেয়ে বাঙালি বারবার দিয়েছে শৌর্য্য-বীর্যের পরিচয়। একুশের বীর শহীদদের রক্তস্রোতে ভেসে গেছে বাঙালির সব দীনতা, হীনতা ও দুর্বলতা।
গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জননেতা মাওলানা গোলাম আম্বিয়া কয়েছ বলেন- ভাষা আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন, যা ছিল বাংলা ভাষাকে তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এই আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নিলেও বস্তুত এর বীজ বপিত হয় বহু আগে, এবং এর ফলও ছিল সুদূরপ্রসারি।
সর্বশেষ পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে মিটিং-মিছিল ইত্যাদি বেআইনি ঘোষণা করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এই আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুসংখ্যক ছাত্র ও কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে মিছিল শুরু করেন। মিছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ মিছিলের উপর গুলি চালায়। গুলিতে নিহত হন সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ আরো অনেকে। এই ঘটনায় সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকার গণআন্দোলনের মুখে নতি স্বীকার করে এবং ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদান করে।
উপস্থিত ছিলেন আফিয়া বেগম, আ. সভাপতি ইব্রাহিম, গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক, মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার আব্দুল হক মেম্বার, ইসমাইল মাস্টার, ফারুক আহমেদ, নজরুল ইসলাম, সয়ফুল আলম আবুল, নজরুল ইসলাম, সুভাষ দাস, জহির উদ্দীন, মাসুক আহমদ আবুল খয়ের, মিসবাহ উদ্দিন, সিএ লুৎফুর প্রমুখ।