জমিয়তের কর্মী সম্মেলনে নূর হুসাইন ক্বাসেমী যা বল্লেন
1 min readনিজস্ব প্রতিনিধি :: গত শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) বেলা ২টায় রাজধানী ঢাকার গুলিস্তানস্থ কাজী বশির মিলনায়তনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র কেন্দ্রীয় কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দলের সভাপতি শায়খুল ইসলাম আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানী (রাহ.)এর অন্যতম বিশিষ্ট খলীফা আল্লামা আব্দুল মু’মিন শায়েখে ইমামবাড়ি’র সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে সারাদেশ থেকে দলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী যোগদান করেন।
সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্যে দলের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, জমিয়তের কাজ যতটা সামনে এগিয়েছে, আমি মনে করি এটা আমাদের সম্মানিত সভাপতির রুহানী মনোযোগ, নীতি-আদর্শে দৃঢ়তা এবং আল্লাহর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ এখলাস ও দোয়ার বরকতেই সম্ভব হয়েছে। হযরতের উসীলাতেই দিন দিন দলের উন্নতি হচ্ছে, এটাই বাস্তবতা। আমি জমিয়তের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি আমাদের সভাপতি হুজুরের (আল্লামা আব্দুল মু’মিন শায়েখে ইমামবাড়ি’র) নির্দেশে।

তিনি বলেন, আজ সবচেয়ে জরুরী হচ্ছে এই দেশে ফিকরে দারুল উলূম দেবওবন্দকে যিন্দা করা, এর যথাযথ চর্চা করা। সালফে সালেহীনের আক্বিদা-বিশ্বাস ও আমল-আখলাকের তরীক্বাকে হেফাজত করা। আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বিদা-বিশ্বাসকে হেফাজত করা। জমিয়তের প্রতিটি নেতাকর্মীর জন্য এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। পাশাপাশি আমাদের মাতৃভূমি প্রিয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের হেফাজতের লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়াও জমিয়ত কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, যে দেশে আমরা বসবাস করছি, আল্লাহ না করুন এই রাষ্ট্র যদি কোন আগ্রাসনের শিকার হয়, আমাদের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হয়, তাহলে রোহিঙ্গারা যেমন আজ রাষ্ট্রহীন নাগরিক হয়ে চরম অসহায় পরিস্থিতির মুখে পড়েছে, আমাদেরকেও সেরকম পরিস্থিতির মুখে পড়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা থাকে না, ধন-সম্পদের নিরাপত্তা থাকে না, ইজ্জত-আব্রুর নিরাপত্তা থাকে না, ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকে না। সবকিছু শেষ হয়ে যায়। এ কারণে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের হেফাজতের জন্য, নাগরিকদের এসব মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জমিয়ত সর্বপ্রকার ত্যাগ স্বীকার করে কাজ করে যাবে, ইনশাআল্লাহ।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জমিয়ত মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকার ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৪টি আসনে ইলেকশন না করে সিলেকশনের মাধ্যমে সংসদ সদস্য বানিয়েছে। এভাবে এই সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে নয়, বরং সিলেকশনের মাধ্যমে সরকার গঠন করেছে। জনগণের মৌলিক অধিকার ও ভোটের অধিকারকে ছিনিয়ে নিয়েছে। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনেও দেখা গেছে, রাতের বেলায় কেন্দ্র দখল করে ভোট চুরি করেছে এবং দিনের বেলায় কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতি করেছে। এভাবে ভোট চুরি ও ডাকাতি করেই এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে

তিনি বলেন, এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার বৈধ অধিকার নেই। দেশের জনগণকে তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে, জনগণের মৌলিক সকল অধিকার তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে হবে। যাতে জনগণ স্বাধীনভাবে ডরভয়হীন পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে সক্ষম হয়। জমিয়ত এই ন্যায্য নীতির সাথে কোনরকম আপোষ করবে না। এই দেশের জনগণের মৌলিক অধিকার ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জমিয়ত অবিচলভাবে কাজ করে যাবে। এখানে কোনরূপ ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ আরো বলেন, আজ দেশের কোটি কোটি কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম পাচ্ছে না। দেশের বহু এলাকা থেকে খবর আসছে, কৃষক বছরের পর বছর উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে লোকসান গুনতে গুনতে নি:স্ব হয়ে চাষাবাদ বন্ধ করে দিয়েছে। শ্রমিক, মজদুর, খেটে খাওয়া মানুষ উপযুক্ত বেতন ও কাজ পাচ্ছে না। এই সংকটসমূহ তৈরি হচ্ছে অনির্বাচিত সরকারের কারণেই।
তিনি বলেন, আজ আমাদের সীমান্তে বিএসএফ গুলি করে এদেশের জনগণকে পাখির মতো হত্যা করছে। এর কোন প্রতিবাদ নেই। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, এটা ভারতের দোষে নয়, এটা আমাদের দোষেই হচ্ছে। তাঁর কথায় মনে হয়, তিনি যেন এদেশের নয় বরং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েই কথা বলছেন।
এদেশের জনগণের অধিকার রক্ষায় যারা কথা বলতে পারে না, যারা দেশের মানুষের জান, মাল ও ইজ্জত-আব্রুর নিরাপত্তা দিতে পারে না, তাদের ক্ষমতায় থাকার কোন অধিকার নেই।
বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে জমিয়ত মহাসচিব উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, সম্মানিত উপস্থিতি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এদেশের ঘরে ঘরে আকাবিরদের চিন্তা-চেতনা সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পৌঁছিয়ে দেবে, ইনশাআল্লাহ। জেলা পর্যায়ে, উপজেলা পর্যায়ে, ইউনিয়ন পর্যায়ে, ওয়ার্ড পর্যায়ে- এভাবে তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক প্রক্রিয়াকে সচল করে দলকে মজবুত করতে হবে। তাহলে জমিয়ত এসকল মহৎ লক্ষ্য নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে, ইনশাআল্লাহ।
আজকের এই সম্মেলনের কর্মসূচীই শেষ নয়, ইনশাআল্লাহ রমজানের পরে আরো বড় আকারের কর্মসূচী আসবে। আজকের সম্মেলনে যে ঘোষণা ও কর্মসূচী দেওয়া হয়েছে, এর বাস্তবায়নে সকলকে ত্যাগী মানসিকতা নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। আগামীতেও দেশ ও জাতির যে কোন প্রয়োজনে জমিয়তের নীতিনির্ধারক ও নেতাগণ সম্মিলিতভাবে দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাবে, ইনশাআল্লাহ। সম্মেলনে কষ্ট স্বীকারে করে যোগদানের জন্য আপনাদের সকলকে মোবারকবাদ ও শোকরিয়া আদায় করছি। পরম করুণাময় আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন।।
সূত্র; উম্মাহ নিউজ