বইমেলায় পাচ্ছেন ডা. শামসুল আরেফীন রচিত “ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ২.০”
1 min readসীমান্ত ডেস্ক :: ডা. শামসুল আরেফীন রচিত ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ২.০ পাচ্ছেন এবারের বইমেলায়।
নিম্নে বইয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে লেখকের কিছু কথা-
এটা একটা বড় এবং চমৎকার আলোচনা। আমার খুবই কষ্ট লাগছে যে, আলোচনাটা আমি করতে পারছি না সাধ মিটিয়ে। শুধু সুতোটা ধরিয়ে দিয়ে শেষ করতে হচ্ছে। ‘মুসলিম সভ্যতার বিজ্ঞান’ আর ‘আধুনিক পাশ্চাত্য বিজ্ঞান’ এক জিনিস না। আরেকটু ভেঙে বলি, মুসলিম সভ্যতার জ্যোতির্বিজ্ঞান আর এখনকার জ্যোতির্বিজ্ঞান, মুসলিম পদার্থবিদ্যা আর এখনকার ফিজিক্স, মুসলিম যুগের রসায়ন আর এখনকার রসায়ন— এক জিনিস না।
মুসলিমদের বিজ্ঞানচর্চার কেন্দ্র ছিল কুরআন-হাদিস-শরীয়াহ:-
আল-খাওয়ারেজমির হাতে ‘বীজগণিত’-এর উন্নয়নের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল ইলমুল ফারায়েজ বা উত্তরাধিকার বণ্টনের সমাধান।
ইসলামী সভ্যতায় ব্যাপক জ্যোতির্বিদ্যা, ভূগোল, গোলীয় জ্যামিতি ও গোলীয় ত্রিকোণমিতি চর্চার মূল শুরুর উদ্দেশ্য ছিল:- পৃথিবীর যেকোন স্থান থেকে কিবলা ঠিক করা, যে কোনো স্থানে সালাতের সময় নির্ধারণ এবং ইসলামী ক্যালেন্ডার উদ্ভাবন। যেহেতু সে সময় নতুন নতুন এলাকা ইসলামী সভ্যতার অধীনে আসছিল।
‘আল্লাহ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার চিকিৎসা সৃষ্টি করেননি’— এই হাদিস মুসলিম চিকিৎসকদের উদ্বুদ্ধ করেছিল গবেষণায়, বিভিন্ন সভ্যতার চিকিৎসাবিদ্যা অনুবাদ ও বিশ্লেষণে। ইবনে নাফিস এই হাদিস দ্বারাই অনুপ্রাণিত হয়ে ‘মানবদেহে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া’ আবিষ্কার করেন ১২৪২ সালে, যেটার ক্রেডিট এখন নেন উইলিয়াম হার্ভে। এবং এর দ্বারা তিনি ‘কিয়ামত’ বা আমাদের মৃত্যু পরবর্তী পুনরুত্থানের ব্যাখ্যা দেন। মদকে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার অনুচিত— তাঁর এই গবেষণাও ইসলামী বিধানকে সামনে নিয়ে করেন।
ইমাম ফখরউদ্দিন রাযী রহ. তাঁর ‘মাতালিব’ কিতাবে ইসলামের কসমোলজি আলোচনা করেন। এরিস্টটলের পৃথিবী-কেন্দ্রিক মডেলের সমালোচনা করেন। এবং ‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ আয়াতের উপর ভিত্তি করে ‘মাল্টিভার্স’-এর অস্তিত্বের ব্যাপারে আলোকপাত করেছেন।
কুরআনের আয়াতগুলো আমাদের বার বার উদ্বুদ্ধ করে আল্লাহর সৃষ্টিকে জানার জন্য।
*বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, কিভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ পুর্নবার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।
*নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধ সম্পন্ন লোকদের জন্যে ।
এজন্যই ইমাম গাযালী রহ. শব ব্যবচ্ছেদ-এর অনুমতি দিয়েছেন বলে জানা যায় । যার ফলে তৈরি হয়েছেন আল-জাহরাভী, আলী ইবনে আব্বাস, আবুল কাসিমের মত সার্জন। দৃষ্টিবিজ্ঞানে ইবনে হাইসামীর মত বিজ্ঞানী।
মোটকথা সব কিছু, এমনকি দর্শনচর্চাও ছিল ইসলাম কেন্দ্রিক। এসব জ্ঞান-বিজ্ঞান এতোটাই ইসলামকেন্দ্রিক ছিল যে ইলমে ওহীকে এসব পৃথক করার জন্য ইমাম গাযালীকে ‘এহইয়াউ উলুমুদ্দীন’ বা ‘দীনী ইলমের পুনরুজ্জীবন’ নামক কিতাব লিখতে হয়েছিল। এবং এসকল বিজ্ঞানীরাও ফরযিয়াত বা ফরয পরিমাণ ‘শরীয়াহর ইলম’ প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই অর্জন করতেন, অনেকেই আলিম হিসেবেও উঁচু মানের ছিলেন। ইমাম রাযী, ইমাম ইবনে রুশদ, ইমাম গাযালী, আল-বিরুনী প্রমুখ আলিম হিসেবেও প্রসিদ্ধ ছিলেন। দীনী জরুরি ইলমের সাথে এইসকল প্রযুক্তিগত সাহায্যকারী জ্ঞান তাঁরা অর্জন করেছেন ও গবেষণায় এগিয়ে গিয়েছেন। যা তাদের ঈমান আরও বৃদ্ধি-ই করেছে।
পক্ষান্তরে বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তি-ই বস্তুবাদ। এই ধারণা যে, বিশ্বের সবকিছুই বস্তু বা শক্তি, এর বাইরে অবস্তু বলে কিছু নেই।
সিদ্ধান্ত দেবার সময় বিজ্ঞান একটা দর্শন ফলো করে— প্রকৃতিবাদ । অর্থাৎ, মহাবিশ্বের সবকিছুই প্রাকৃতিক। অতিপ্রাকৃতিক বলে কিছু নেই। যেহেতু সবকিছুই প্রকৃতির অংশ, মানে স্থান-কালের অংশ, তাহলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সবকিছুই ডাইরেক্টলি বা ইনডাইরেক্টলি পর্যবেক্ষণ করাও সম্ভব, এমনকি মনোজগতও। যা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব না, তার অস্তিত্বও নেই। এবং পর্যবেক্ষণযোগ্য বিজ্ঞানই একমাত্র নির্ভরযোগ্য জ্ঞান।
তার মানে সব তথ্যপ্রমাণ যদি অতিপ্রাকৃত কিছুর দিকে ইঙ্গিত করেও, তবু বিজ্ঞান সেটা স্বীকার করতে পারবে না। ইনিয়ে-বিনিয়ে প্রাকৃতিক একটা সম্ভাবনার কথা বলবে, নয়তো চুপ করে থাকবে। কারণ বিজ্ঞান এটা শুরুতেই বিশ্বাস করে নিয়েছে পরম সত্য হিসেবে, নিজের মূলনীতি হিসেবে যে— ‘সব পর্যবেক্ষণ করা যাবেই; যা কিছু যাবে না তা কুসংস্কার’। যেহেতু কেন্দ্রেই রয়েছে ‘স্রষ্টা বলে কিছুর অস্তিত্ব বুঝা গেলেও স্বীকার করা যাবে না’, সুতরাং আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে মুসলিম সভ্যতার বিজ্ঞানের গোড়াতেই সংঘর্ষ।
দ্বিতীয়ত, পশ্চিমা বিজ্ঞান যেহেতু এনলাইটেনমেন্টের দর্শনের উপর দাঁড়িয়ে, যেমনটা বিজ্ঞানী Rupert Sheldrake তাঁর Science Set Free 10 Paths To New Discovery বইয়ে বলেন: ‘…কিন্তু যে চিন্তাধারা আজকের বিজ্ঞানকে পরিচালিত করছে তা স্রেফ বিশ্বাস, যার শেকড় গেঁথে আছে ঊনবিংশ শতকের ভাবতত্ত্বের উপর’। ঠিক সে কাজও করবে তেমনই। বর্তমান পশ্চিমা বিজ্ঞানের কাজই হল পশ্চিমা দর্শন ও নিত্যনতুন ধারণাগুলোকে সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করা। বিবর্তনবাদ, নারীবাদ, নাস্তিকতাবাদ, সমকামিতা— এগুলোর পায়ের নিচে মাটি দেয়া। রিসার্চের নামে , জরিপের নামে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এগুলোকে দুনিয়ার সামনে অকাট্য হিসেবে উপস্থাপন করা। মোদ্দাকথা, বিজ্ঞান এখন একটা পুঁজিবাদের হাতিয়ার । সুতরাং ইসলামী সভ্যতার বিজ্ঞানের দলিল দিয়ে পশ্চিমা পুঁজিবাদী ইসলামবিরোধী বিজ্ঞানকে জায়েয বা ওয়াজিব বানানো মূর্খতা ছাড়া আর কিছু না। বিস্তারিত জানতে ডা. রাফান আহমেদ-এর ‘হোমো স্যাপিয়েন্স: রিটেলিং আওয়ার স্টোরি’ বইটি দেখুন।
আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা এটা যে, ইউরোপ জ্ঞানবিজ্ঞানে উন্নত, তাই ওরা উন্নত। কক্ষনো নয়। বরং ওদের আজকের এই উন্নত হবার পেছনে এশিয়া, আফ্রিকা আর উত্তর-দক্ষিণ আমেরিকার সম্পদ লুণ্ঠনই একমাত্র কারণ। যাদের ধারণা আছে তারা জানেন, রিসার্চ করতে ফান্ডিং লাগে। ইউরোপের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ফান্ডিং গিয়েছে উপনিবেশ থেকে। সামরিক আগ্রাসনই তাদের আজকের অবস্থানের একমাত্র মূল কারণ।
একই কথা আমাদের ইসলামী সভ্যতার বেলায়ও সমান সত্য। স্পেন থেকে কাশগড় অব্দি শরীয়াহ শাসন প্রতিষ্ঠা করে যে উন্নতির পরিবেশ, বিদ্যোৎসাহী খিলাফত, জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চার এক আবহ তৈরি হয়েছিল। সেই ক্ষেতেরই ফসল ইসলামী সভ্যতার বিজ্ঞান। আফসোস আমরা ফসলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, আর চাষীদের কথা যেন মুখে আনাই পাপ। যারা রক্ত দিয়ে জমিন চষে দিয়ে গেল, তারা আজ আমাদের কাছেই বড় অপাংক্তেয়। জমিন না চষেই ফসলের স্বপ্নকে খাঁটি বাংলায় বোধ হয় ‘দিবাস্বপ্ন’-ই বলে, না?
১৩ নং পরিশিষ্ট
ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ২.০
বইমেলায় ইনশাআল্লাহ।