“সিলেটের জৈন্তা ও কানাইঘাটে ওয়াজ কিংবা কনসার্ট বন্ধের ব্যাপারে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কি কেউ দেবেন?”
1 min read[সৈয়দ মবনু]
এক.
সালমা যদি বলে আমি মবনুকে বিয়ে করবো না, এর অর্থ কি সালমা বিয়ে বিরোধী? এখন যদি সালমার পরিবার তাকে বলেন, তুমি বিয়ে করলে মবনুকেই করতে হবে, নতুবা না, আর সালমাও বলে আমি মবনুকে বিয়ে করবো না, আর এভাবে বিয়ে ভেঙে যায় তবে কি বলা যাবে সালমা বিয়ে বিরোধী, তাই এই বিয়ে হচ্ছে না? অতঃপর সালমা বিয়ে বিরোধী অপবাদ দিয়ে মবনুর অনুসারীরা যদি নিন্দা করতে থাকেন তবে আপনিও কি তা সমর্থন করবেন? আপনি কি মনে করেন, মবনুকে বিয়ে না করা আর বিয়ে বিরোধী হওয়া সমার্থক?
দুই.
একাত্তরে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী ছিলো তাদের মধ্যে একটি ইসলামী দলও রয়েছে, এখন যদি কেউ বলে সকল ইসলামী দল স্বাধীনতা বিরোধী ছিলো তা কি সত্য? কোন মুক্তিযোদ্ধা যদি একজন ইসলামপন্থী রাজাকারের বিরোধীতা করে, আর সেই রাজাকারের সমর্থকরা এই ব্যক্তিকে ইসলাম বিরোধী চিহ্নিত করে নিন্দা করতে থাকে, তখন কি আপনিও এই ব্যক্তিকে ইসলাম বিরোধী বলবেন? মোটে প্রশ্ন হলো, একটি ইসলামী দল কিংবা বিশেষ কিছু মানুষ রাজাকার ছিলো বলে কি ইসলামী দল অর্থ-ই রাজাকার কিংবা রাজাকারের বিরোধীতা মানেই কি ইসলামের বিরোধীতা?
তিন.
সিলেটের জৈন্তা ও কানাইঘাটেরর বিশিষ্ট্য আলেম মাওলানা আলিম উদ্দিন দুর্লভপুরীর নেতৃত্বে কিছু মানুষ জনৈক মৌলভীর ওয়াজে প্রধান অতিথি বা উপস্থিত হওয়ার ব্যাপারে আপত্তি করেছেন আকিদা বা বিশ্বাসগত কারণে, অতঃপর ঐ মৌলভীর অনুসারীরা নিন্দা জানাতে শুরু করেছেন এই বলে যে, মাওলানা দুর্লভপুরী ওয়াজ বিরোধী, তাফসিরুল কোরআন বিরোধী। প্রশ্ন হলো, একজন বিশেষ ব্যক্তির উপস্থিতির ব্যাপারে আপত্তি করা আর ওয়াজ বা তাফসিরে কোরআন বিরোধী হওয়া কি সমার্থক? মাওলানা দুর্লভপুরী কি ওয়াজের বিরোধীতা করেছেন, না ওয়াজে আসা বিশেষ কোন ব্যক্তির বিরোধীতা করেছেন?
চার.
একাত্তরে কিংবা একাত্তরের পর এদেশের অনেক আলেম এবং ইসলামপন্থী মানুষ রাজাকার, আল বদর, আল শামসদের কৌশল না বুঝে রাজাকার বিরোধীতাকে ইসলাম বিরোধীতা বলে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বাঁকা চোখে দেখার নীতি গ্রহণ করেছিলেন। ফলে একদিকে ইসলাম এবং আলেম-উলামাদের মান-ইজ্জতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, অন্যদিকে এদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সাধারণ ইসলাম প্রেমিক অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর চলেগেছে এই বিভ্রান্তিকর অপপ্রচারের জাল ভেদ করে ইসলামপন্থীদের বেরিয়ে আসতে। প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা আব্দুল্লাহ হরিপুরী প্রমূখ এক সময় মাওলানা দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে সিলেটে প্রতিরোধ আন্দোলন করেছেন। প্রশ্ন হলো তা কেন? তাদের ঐ আন্দোলন কি ভুল ছিলো? কিংবা মাওলানা মওদুদীর বিরুদ্ধে দেওবন্দি-ফুলতলি সহ বিভিন্ন ইসলামী গ্রুপের বিশ্ববিখ্যাত অসংখ্য আলেমের ফতোয়া রয়েছে, সেগুলো কি ভুল বা অশুদ্ধ? যদি সেগুলো ভুল বা অশুদ্ধ না হয় তবে কেন মাওলানা আলিম উদ্দিন দুর্লভপুরীর জনৈক বক্তার বিরোধীতা ভুল হবে?
পাঁচ.
জৈন্তা ও কানাইঘাটে নাকি কোন নর্তকী এসে কনসার্ট করেছে। জনৈক বক্তার ভক্তরা এখন প্রশ্ন করছেন, সিলেটের জৈন্তা ও কানাইঘাটের ততাকথিত মাওলানা আলিম উদ্দিন দুর্লভপুরীর অনুসারীরা কোথায়? যারা কুরআনের তাফসির মাহফিল বন্ধ করেছিলে! কেউ আবার অসভ্যের মতো তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, ‘যেই স্থানে… তাফসির মাহফিল বন্ধ করেছিলে সেখানেই নর্তকীদের এনে কনসার্ট হচ্ছে। দুর্লভপুরী তুমি তো আলেম নামের কলঙ্ক। তোমাকে আলেম ভাবতেও লজ্জা লাগে, তুমি যে কাজ করেছো তা একটি জাহিল করতেও লজ্জাবোধ করবে। তোমাদের কারনেই আজকে ইসলামের বারোটা বাজছে। মাজারীদের নিয়ে কুরআনের মাহফিল ঠিকই বন্ধ করিয়েছো, কিন্তু কনসার্ট বন্ধ করানোর মতো ঈমানী শক্তি নাই তোমাদের।’ তারা কেউ কেউ আরেকটু এগিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন. কনসার্টের আয়োজনকারীদের কাছ থেকে মাওলানা আলিম উদ্দিন দূর্লভপূরীরা মোটা অংকের টাকা খেয়ে অমুকের তাফসির মাহফিল বন্ধে কাজ করেছিলেন এবং উনারা সফলও হয়েছিলেন। তাইতো একই মঞ্চে কুরআনের তাফসিরের পরিবর্তে নর্তকীদের কনসার্টের আয়োজন। কি বুঝলেন আপনারা? ওদের চক্রান্তের কাছে আবু জেহেলও ফেইল। আস্তাগফিরুল্লাহ…।’ এখানে আমার প্রথম প্রশ্ন; কনসার্ট কোথায় হয়েছে- কনসার্ট আর ওয়াজ কি একই মাঠে বা একই এলাকার বিষয়, অর্থাৎ তা জৈন্তা না কানাইঘাটে? দুর্লভপুরী জৈন্তা না কানাইঘাটের বাসিন্দা? এই সকল এলাকায় কি তিনি বা তাঁর অনুসারী ছাড়া আর কোন ঈমানদার নেই? দ্বিতীয় প্রশ্ন; সব কাজ সর্বদাই কেন দুর্লভপুরী কিংবা মাওলানা হাবিবুর রহমানরা করতে হয়? সবাই মিলেমিশে ভাগ করে কাজ করলে কি আরও সুন্দর হয় না? দুর্লভপুরী-প্রিন্সিপাল হাবিবরা না হয় আকিদা-বিশ^াসের জায়গা থেকে কাজ করলেন, বাকিরা কেউ নর্তকীদের কনসাট বন্ধের চেষ্টার দায়িত্ব নিলেই হয়। যারা আজ মাওলানা আলিম উদ্দিন দুর্লভপুরীর দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে প্রশ্ন করছেন তারা কোথায় ছিলেন এই কনসার্ট বন্ধের সময়? তারা কেন ময়দানে এলেন না? তাদের কি ঈমানী দায়িত্ব বলে কিছু নেই?