তাফাজ্জুল হক রহঃ স্মরণে জমিয়তের বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত
1 min read
দেশবরেণ্য প্রবীণ বুযূর্গ আলেম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি, হবিগঞ্জ জামেয়া আরাবিয়া উমেদনগর টাইটেল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদীস আল্লামা হাফেজ তাফাজ্জুল হক মুহাদ্দিসে হবিগঞ্জীর (রাহ.)এর মাগফিরাত ও দরজাবুলন্দির জন্য গতকাল (৮ জানুয়ারী) বুধবার বিকেল ৩টায় রাজধানী ঢাকা’র পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ দলীয়ভাবে এক বিশেষ দোয়া-মুনাজাত মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র সহসভাপতি আল্লামা আব্দুর রব ইউসুফীর সভাপতিত্বে দোয়া মাহফিলে প্রধান আলোচকের বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী।
আরো বক্তব্য রাখেন- সহসভাপতি মাওলানা জহিরুল হক ভূঁইয়া, মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, যুগ্মমহাসচিব মাওলানা তাফাজ্জুল হক আজীজ, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, সহকারী মহাসচিব মাওলানা মতিউর রহমান গাজীপুরী, মাওলানা সানাউল্লাহ মাহমূদী, মুফতি নাসির উদ্দীন খান, মাওলানা বশিরুল হাসান খাদিমানী, মাওলানা মুহিউদ্দীন মাসুম, মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা তাজুল ইসলাম, মাওলানা গোলাম মাওলানা, মাওলানা আব্দুল গাফফার ছয়গরী, আলহাজ্ব মাওলানা ইমরানুল বারী সিরাজী প্রমুখ।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম আল্লামা হবিগঞ্জীর সকল অবদান গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছে। দলের উন্নতি, অগ্রগতি, ঐক্য ও যেকোন প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁর দুরদৃষ্টি ও বিচক্ষণতা আমাদের সকলের জন্য উত্তম পাথেয় স্বরূপ। তাঁর ইন্তিকালে দলের প্রতিটি নেতাকর্মী গভীরভাবে শোকাহত। দলের জন্য তাঁর অকৃত্রিম অবদান, ত্যাগ ও খেদমত ছিল অমূল্য ও অতুলনীয়।

তিনি আরো বলেন, আল্লামা গহিগঞ্জী এমন এক ঈর্ষনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন যে, তিনি শুধু জমিয়ত নয়, বরং দলমত নির্বিশেষে ইসলাম ও দেশপ্রেমিক সকলের প্রিয় ও শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। ঈমান-আক্বিদা ও ইসলামের যে কোন প্রয়োজনে যেমন তিনি সবার আগে থাকতেন, তেমনি দেশ ও জাতির যে কোন স্বার্থে সামনে এগিয়ে আসতে দ্বিধা করতেন না। দ্বীনি বিষয়ের পাশাপাশি গণমানুষের অধিকার, ইনসাফ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেও তিনি অকুতোভয় লড়াকু সৈনিকের ভূমিকা পালন করেছেন আমৃত্যু। রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও আমি তাঁর কাছ থেকে সবসময় মূল্যবান পরামর্শ ও সহযোগিতা পেয়ে এসেছি।
আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী আরো বলেন, আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী (রাহ.) ইসলমে দ্বীন তথা মাদ্রাসা শিক্ষার প্রচার-প্রসার ও দরস-তাদরিসে যেমন আজীবন কাটিয়েছেন, তেমনি বেফাক ও হাইয়্যাতুল উলইয়ার কার্যক্রমেও সুদক্ষ নেতৃত্ব ও পরামর্শ দিতেন। যে কোন সংকটে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেন। হেফাজতে ইসলামের ঈমান-আক্বীদার আন্দোলনে আল্লামা হবিগঞ্জীর বীরোচিত ভূমিকা ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
জমিয়ত মহাসচিব বলেন, আজকেও আমাদের বারিধারা মাদ্রাসায় ২য় সামিয়ক পরীক্ষা হয়েছে। আগামী কাল পরীক্ষা শেষ হবে। আরো অনেক মাদ্রাসায় পরীক্ষা চলছে। আর দুই দিন পর অর্থাৎ শুক্রবার থেকে বিশ্ব ইজতিমা। তাই এই সময়ে আমরা বড় পরিসরে করার সুযোগ না পেয়ে আপাতত: সংক্ষিপ্ত পরিসরে দোয়া-মাহফিলের আয়োজন করেছি। ইনশাআল্লাহ ইজতিমা শেষে পরামর্শের ভিত্তিতে সুবিধামতো সময়ে আরো বড় পরিসরে ব্যাপক সময় নিয়ে মরহুম আল্লামা হবিগঞ্জী হযরতের জীবন ও কর্ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা সভার আয়োজন করবো। যাতে তাঁর জীবনী থেকে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম উত্তম দিকনির্দেশনা ও মূল্যবান পাথেয় হাসিল করতে পারে এবং তাঁর জন্য আমরা সকলে মন ভরে দোয়ায় শামিল হতে পারি।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী বলেন, আল্লামা হবিগঞ্জী ছিলেন বাতিলের আতংক স্বরূপ। তিনি কখনো হক্ব কথা বলতে কাউকে পরোয়া করতেন না। সকলের সাথে অত্যন্ত হাসিখুশি ও আন্তরিক আচরণ করতেন। সৎ ও উত্তম কাজে সবসময় উৎসাহ যোগাতেন। যে কোন পেরেশানীতে সাহস দিতেন এবং অন্যায়, অপরাধ ও বাতিলের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ করতে কখনো দ্বিধা করতেন না। পাশাপাশি কওমী মাদ্রাসা শিক্ষার প্রচার-প্রসার এবং উন্নয়নেও মরহুম আল্লামা হবিগঞ্জীর অসামান্য শ্রম ও মেহনতের কথা জমিয়ত বিনয় ও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। এসকল বহুবিদ গুণাবলীর কারণে তিনি সকলের কাছে শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে সমাদৃত ছিলেন। দল-মতের ঊর্ধ্বে তাঁকে সকলেই ভালবাসতেন। তাঁর জীবনীর আলোচনা থেকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য মূল্যবান দিক-নির্দেশনা পাওয়া যাবে। ইনশাআলা, পরবর্তীতে আরো বড় পরিসরে হবিগঞ্জী হযরতের জীবন ও কর্মের উপর আলোচনা সভা হবে।
উপস্থিত নেতৃবৃন্দের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে বিকেল ৫টায় বিশেষ দোয়া-মুনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া পরিচালনা করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী।
সূত্র: উম্মাহ নিউজ