ভরে গেছে ইজতেমার মাঠ, রাস্তায় তাবু ফেলছেন মুসল্লিরা
1 min read
আব্দুল্লাহ আল মবিন ও মাহমুদুল হাসান (ইজতেমার ময়দান থেকে) :: শীতের রাত। শিশিরে ভিজে আছে টঙ্গীর ঘর-বাড়ি। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিতে পূর্ণ মাঠ। তাদের উপর ঝুলে আছে সোনালি আলো। পথ-ঘাট মানুষের পদচারণায় মুখরিত। মানুষ আসছে। রাত পোহাবার আগেই পূর্ণ মাঠের চতুপার্শ। সকাল গড়িয়ে দুপুর, এখনো মানুষের আগমন চোখে পড়ার মতো৷ দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের বন্দেগি, জিকির-আজকারের টঙ্গীর তুরাগ তীরের বিস্তীর্ণ প্রান্তর এখন পুণ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে।
বৃদ্ধ, যুবক, কিশোর ও তরুণসহ সকল বয়সের মুসল্লিরা পায়জামা-পাঞ্জাবী গায়ে টুপি মাথায় জড়ো হয়েছেন তুরাগ তীরের টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমায়।
বিশ্ব ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা গেছে, টঙ্গীর তুরাগ তীরে ১৬০ একর বিস্তৃত বিশ্ব ইজতেমা ময়দান প্রায় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা অবস্থান নিয়েছেন তাবুর নীচে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর মুসল্লিদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ময়দানে জায়গা না পেয়ে রাস্তার পাশে তাবু ফেলতে দেখা গেছে অনেক মুসল্লিকে।
লক্ষ্য যখন মহান রবের সন্তুষ্টি তখন ভোগান্তি নিয়ে নেই কোন অভিযোগ। দীর্ঘ জার্নি আর জায়গা না পাওয়ার কষ্ট পরকালের পুরস্কারের আশায় আমলে নেননি ইজতিমায় আগত দেশ বিদেশের মুসল্লিরা।
তাদেরই একজন নড়াইলের কবির হোসেন (৬৯) প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে নানান চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এসেছেন বিশ্ব ইজতেমায় শরিক হতে। ময়দানে জায়গা না পেয়ে রাস্তার পাশেই তাবু ফেলেন তার সাথীরা। বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে তার অনুভূতি কী জানতে চাইলে তিনি জানান, এখানে লক্ষ লক্ষ লোক নামাজ পড়ে এখানে নামাজ পড়তে পারলে অনেক বেশি ফায়দা।
আর ফায়দা হাসিল করার জন্য আমাদের এখানে আসা। আমাদের লক্ষ্য দ্বীনের সেবা করা এবং মুরব্বিদের বয়ান শোনা সাথে সাথে নিজেকে হেদায়েতের পথে আনা।
ময়দানে জায়গা না পাওয়াতে আমাদের মনে কোন দুঃখ নেই। আমরা এখানে কুরবানী করার জন্য এসেছি। ছোটবেলা থেকে টাকা কামানোর চিন্তা ছিলাম এখন এসব ভুলে গেছি৷ সূরা পড়তে পারিনা। ভুল হয় তাই আমরা এখানে এসেছি নিজেকে সহি পথে আনতে। কোরানে সূরা শিখতে।
সিলেট থেকে আগত রাকিব (২১) নামের এক তরুণ জানান, আমরা এখানে আল্লাহর জন্য এসেছি দিনের কথা শোনার জন্য এসেছি সুতরাং এই কষ্ট কোন কষ্ট না পরকালের আশায় আমরা এটাকে আনন্দ মনে করছি। আরো যদি বড় কোন কষ্ট করতে হয় হয়, আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি, এতে আমাদের কোন দুঃখ নেই।
কুড়িগ্রাম থেকে আগত নাসির উদ্দিন নামের এক মুসল্লি জানান, আল্লাহর জন্য অনেক কষ্ট করে এখানে এসেছি। বাসে জায়গা নেই তাই ছাদে চড়ে এসেছি। ময়দানে এসে দেখি জায়গা নেই, তাই রাস্তার পাশেই তাবু ফেলেছি। এ কষ্ট কি আমরা কোন কষ্ট মনে করি না, প্রকৃত কষ্ট হচ্ছে জাহান্নামের কষ্ট, ওই কষ্ট থেকে বাঁচার জন্যই আমরা এখানে এসেছি। এই বিশ্ব ইজতেমাকে যেন আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন এবং সুন্দরভাবে চলে আমরা সবসময় এই কামনা করি।
ইজতেমা ঘিরে মানুষে মানুষে এই ত্যাগ আল্লাহতায়ালা কে সন্তুষ্ট করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা লাভের আশায়। মুসলমানদের মধ্যে এই যে বড় ঐক্য, এটা তাবলিগ জামাতের অবদানেই। আলেমদের আবদানেই। যারা দ্বীনের পথে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন। আল্লাহর রাসূলের বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার কাজ নিমজ্জিত তারাই এখানে আসার সৌভাগ্য লাভ করে থাকেন।
সূত্র- আওয়ার ইসলাম