বিশ্ব ইজতেমা: সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের জয়গান
1 min read[মাওলানা তৈয়্যিবুর রহমান চৌধুরী]
ইসলাম প্রচারের একটি কালোজয়ী বিশ্বনন্দিত জামাতের নাম দাওয়াত ও তাবলিগ। আল্লাহভুলা মানুষকে খোদাপ্রীতি শিক্ষা, অন্ধকারাচ্ছন্ন জাতিকে আলোর পথ দেখানো, দিকভ্রান্ত মানবতার আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের নাম তাবলিগ। পথভুলা মানবতার গাইডলাইন, উদ্বাস্থ জনতার নীড়, অশান্ত মানবের শান্তনাস্থল, জাহান্নামের পথিককে জান্নাতের পথে নিয়ে আসার নাম তাবলিগ। যার সংস্পর্শে এসে আলোকিত হয়েছে লক্ষ লক্ষ অন্ধকার জগতের মানুষ। নিজেকে সংশোধন করে মানবাত্মার চরম উৎকর্ষ সাধন করেছে অসংখ্য অগনিত বনী আদম। দীক্ষা গ্রহন করেছে পরোপকার ও মানবতার। তালিগের বিনিময়ে অসাম্প্রদায়িক লোকেরা পেয়েছে সম্প্রীতি, সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব। কৃপন বখাটে ও অহংকারী লোক পেয়েছে আল্লাহর পথে নিজের জান ও মালকে বিলিয়ে দেবার শিক্ষা, চুর ডাকাত পেয়েছে তার জীবনের আসল পরিচয়। গুন্ডা মাস্তান হয়েছে শান্ত ভদ্র ও আল্লাহওয়ালা।
দাওয়াত ও তাবলিগ একটি বিশ্বনন্দিত মাকবুল জামাত। আসলাফ আকাবিরের রেখে যাওয়া আমানত। আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে বুলন্দ করার এক মিশন। যুগযুগ দরে চলে আসা মিশনটি আজ বিশ্বব্যাপি বিস্তৃত ও সমাদৃত। সম্পুর্ন খালিছ দ্বীনি প্রতিষ্টান হিসাবে দাওয়াত ও তাবলিগের মহান কাজটি আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে।
একজন ইলিয়াস রহ: এর ইখলাছ ও মেহনতের ফসল আজকের দাওয়াত ও তাবলিগ। চরম প্রতিকুল ও বৈরি পরিবেশ উপেক্ষা করে জামাতটিকে তিলে ছড়িয়ে দেন বিশ্বময়। তার তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ ও নিষ্ঠার বিনিময়ে আজ তাবলিগ পৃথিবীর কোনায় কোনায় দ্বীনের মশাল জালিয়ে যাচ্ছে। মহান দাওয়াত ও তাবলিগের খেদমত আজ বিশ্বের এমন কোন দেশ নেই যেখানে পৌছেনি। বিশ্বের দু’শতাধিক দেশে তাবলিগের আলমী কার্যক্রম চলছে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে বিশ্বের মধ্যে অগ্রগামী। বাংলাদেশের সৌভাগ্য মাকবুল এই মিশনের বিশ্ব শান্তি সম্মেলন (ইজতেমা) অনুষ্টিত হয় টঙ্গীতে।বিশ্বমোড়লদের মিলনমেলা আমেরিকায় হলেও দাওয়াত ও তাবলিগের মিলনমেলা বসে ঢাকায়।
বিশ্ব ইজতেমা একটি ঈমানি জাগরণ। গোটা মুসলিম বিশ্বের নিকট একটি প্রাণসঞ্চার। দাওয়াত ও তাবলিগের অভুতপুর্ব এক ঝংকা। আল্লাহ ওয়ালাদের মিলনমেলা। নুরানী কাফেলার বিশ্বময় এই ঝমকালো আয়োজন বাংলাদেশের ফখর। এটি আমাদের জন্য গৌরবের। বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমুর্তি উজ্জল করে যাচ্ছে শান্তিপুর্নভাবে অনুষ্টিত বিশ্বইজতেমা। প্রতি বছর আল্লাহর নিবেদিত বান্দাগণের ঢল নামে টঙ্গিতে। বিশ্ব ইজতেমা বাংলাদেশী ঐতিহ্যের ধারক বাহক হয়ে উঠেছে। তাই ইজতেমা গমনের প্রতিযোগিতা প্রতিটি মোমিনের অন্তরে জাগরূক। ইজতেমার অনুষ্ঠিত হয় টঙ্গির তুরাগ পাড়ে। ১৬০ একর জায়গার উপর আয়োজিত হয় ইজতেমার মূল প্যান্ডেল। জনতার সতস্ফুর্ত উপস্থিতি একসময় পুরো টঙ্গিতে ছড়িয়ে পড়ে।
এবার ২০২০ সালের ইজতেমা বিভিন্ন কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যমন্ডিত। বিগত কয়েক বছর থেকে তাবলিগের চলমান সংকট মোকাবেলা করে উলামায়ে কেরামের তত্বাবধানে পৃথক ইজতেমা নতুন উদ্যোমে শুরু হয়েছে। অালমী শুরার তত্বাবধানে এবারের ইজতেমাকে কামিয়াব করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। ইজতেমার মূল প্যান্ডেল বিগত দিনের চাইতে অনেক বড় করে সুবিশাল মাঠ তৈরি করা হয়। নির্ধারিত জায়গার বাইরে পুরো মাঠে প্যান্ডেল তৈরি করা হয়। অালহামদুলিল্লাহ। তৌহিদী জনতার ঢল নেমেছে এবারের ইজতেমাস্থলে। অানুষ্ঠানিক শুরু হওয়ার পূর্বে পুরো প্যান্ডেল কানায় কানায় ভরে উঠেছে। গতকাল রাতের মধ্যে সব খিত্তা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। আজ ইজতোমার অাশেপাশের সড়ক ও খোলা জায়গা মুসুল্লিদের দখলে চলে এসেছে। পরিস্তিতি বিবেচনা করে আজ টঙ্গির সব মসজিদ, স্কুল কলেজ ও মাদারিস সমুহকে উম্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। সাউন্ট সিস্টেম ও মাইকের ব্যবস্থা বর্ধিত করা হচ্ছে। অাশা করা হচ্ছে এবারের ইজেতমা পিছনের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করবে। উপস্থিতির পরিমাণ অর্ধকোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। এযেন ঈমানদীপ্ত জনতার বাঁধভাঙা জনস্রোত। উলামায়ে কেরামের অাহবানে তাবলীগ ফিরে পেয়েছে তাঁর হারানো যৌবন। এ যেন সহি পদ্ধতির তাবলিগের প্রতি দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন।
বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে শুরু হচ্ছে ইজতেমা। আগামিকাল বাদ ফজরের পর শুরু হওয়ার কথা থাকলেও একদিন পূর্বে আজ অাছরের নামাজ পড়ে অানুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে ইজতেমার। ঈমান তাজাকরনের এই মেহনত চলবে রবিবার অাখেরি মোনাজাত পর্যন্ত। এবারের বিশ্ব ইজতেমা হোক বিশ্ব শান্তির বার্তাবাহক। নির্যাতিত নিপিড়ীত মুসলমানদের মুক্তির মোহনা। ইজতেমার দাওয়াত ও পয়গাম ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বময়। দুরীভুত হোক সকল আন্ধকার ও কুসংস্কার। ইসলামের আলোয় আলোকিত হোক পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র। দেশে দেশে প্রতিষ্টিতি হোক খোলাফায়ে রাশেদার রাজপ্রাসাদ।
লেখক:- মাওলানা তৈয়্যিবুর রহমান চৌধুরী মুহাদ্দিস ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ