‘সাদা পাথর’ মলিন না করার উদ্যোগ
1 min read
সিলেটের নতুন পর্যটনকেন্দ্র কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ‘সাদা পাথর’–এ প্রতিদিন ২০টি পর্যটন বাস আর ১৫৫টি নৌকা চলাচল করে। দুই থেকে তিন হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে। এর মধ্যে ছুটির দিনে এ সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে পড়ে। হাজারও পর্যটকের পদচারণের সঙ্গে ছিল যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার প্রবণতা। এতে করে সাদা পাথর এলাকা মলিন হওয়ার উপক্রম ছিল। এ অবস্থায় গতকাল শুক্রবার ময়লা-আবর্জনা ফেলার ২০টি স্থান নির্ধারণ করে সাঁটানো হয়েছে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড।
সাদা পাথর মলিন না হওয়ার এ উদ্যোগ গতকাল শুক্রবার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন বাস্তবায়ন করেছে। এ উদ্যোগে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পর্যটন সংগঠনসহ এলাকাবাসীও একাত্ম হয়েছিলেন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন আচার্যের নেতৃত্বে গতকাল বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ঘণ্টাখানেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান হয়। শেষে ৩০টি স্থান নির্ধারণ করে সেখানে বড় ড্রামের তৈরি ডাস্টবিন ও সতর্কতামূলক দুটো সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ এলাকায় সীমান্তের ধলাই নদের উৎসমুখে সাদা পাথর এলাকার অবস্থান। ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল লুংলংপুঞ্জি ও শিলংয়ের চেরাপুঞ্জি, এপারে ধলাই নদের উৎসমুখের বিস্তৃত এলাকায় সারা বছর নদের পানি প্রবহমান থাকে। বৃষ্টিবহুল চেরাপুঞ্জির পাদদেশ থেকে বর্ষায় ঢলের পানির সঙ্গে পাহাড় থেকে পাথরখণ্ড এপারে নেমে আসে। ২০১৭ সালে পাহাড়ি ঢলে পাথর জমা হওয়ায় কোম্পানীগঞ্জের তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল লাইছ পাথর সংরক্ষণ করেন। এ নিয়ে ২০১৭ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় ‘ধলাইমুখে আবার জমল ধলাসোনা’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়। সেই থেকে এলাকাটি ‘সাদা পাথর’ পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়।
উপজেলা প্রশাসন জানায়, গত ১৫ ডিসেম্বর ‘সাদা পাথর পরিবহন’ নামের একটি বাস সার্ভিস চালু করেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা। যাতায়াত নির্বিঘ্ন হওয়ায় প্রতিদিন অন্তত তিন হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে। এর মধ্যে শুক্র, শনিবারসহ ছুটির দিন ১০ হাজার পর্যটকের পদচারণ ঘটে। বিপুলসংখ্যক পর্যটকের সমাগম হওয়ায় পুরো এলাকা যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে। এই অবস্থায় গতকাল উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি, ট্যুরিস্ট ক্লাবের সদস্য ও সাদা পাথর এলাকায় চলাচলকারী নৌকার মাঝিদের নিয়ে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নামে। এরপর ৩০টি স্থান ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য নির্ধারণ করে সেখানে ড্রাম বসানো হয়। যত্রতত্র ময়লা না ফেলার নির্দেশিকা দিয়ে স্টিল দিয়ে নির্মিত দুটো সাইনবোর্ডও সাঁটানো হয়। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই কর্মযজ্ঞ।
কাজ শেষে ইউএনও সুমন আচার্য বলেন, ‘যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলায় সাদা পাথর নামের স্থানটি যেন দেখতে মলিন হয়ে পড়ছে। এ অবস্থার পরিবর্তনে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্পৃক্ত করে পরিচ্ছন্নতার অভিযান শেষে সাইনবোর্ড ও ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়েছে। আমরা আশা করছি সাদা পাথর মলিন না হওয়ায় ভূমিকা রাখবে আমাদের এ উদ্যোগ।’
পশ্চিম ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন,‘দেখার সৌন্দর্য যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে মানুষ কী দেখতে এখানে আসবেন? তাই প্রশাসনের উদ্যোগের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে আমরাও পরিচ্ছন্নতায় অংশ নিয়ে সচেতন থাকার আহ্বান জানাই।’