কোম্পানীগঞ্জে বোমার তাণ্ডব; লিলাইবাজারে কোটি টাকার পাথর লুট
1 min readকোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি :: সিলেটে প্রশাসনের অভিযানেও থামছে না পাথর উত্তোলন। চিহ্নিত স্পটগুলোতে প্রশাসন অভিযান চালাচ্ছে। আর পাথরখেকোরা এবার গিয়ে ঢুকছে লোকালয়ে। যন্ত্রদানব বোমা মেশিন দিয়ে অবাধে পাথর উত্তোলন করছে কালিবাড়ির লিলাইবাজারে। অর্ধশতাধিক বোমা মেশিন দিয়ে গত ১০ দিনে প্রায় দুই কোটি টাকার পাথর লুটপাট করা হয়েছে। ভেঙে দেয়া হয়েছে বাজারের একাংশ। দয়ারবাজার থেকে কলাবাড়ি রাস্তাও নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েও কোনো প্রতিকার মিলছে না।
এতে করে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পাথরখেকো সিন্ডিকেট। কোম্পানীগঞ্জের লিলাইবাজার কালীবাড়ি এলাকা। পাথর সমৃদ্ধ ওই এলাকায় অবাধে লুটপাটের কারণে গোটা এলাকা বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে।
পাথরখেকোদের থাবায় গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ চলতি বছরের শুরুতেই পাথরখেকো চক্রের সদস্যরা মিলে কলাবাড়ির বসতি ও বাজার এলাকায় বোমা মেশিন দিয়ে পাথর লুটপাট চালায়। খবর পেয়ে গত ৭ই জানুয়ারি ওই এলাকায় অভিযান চালিয়েছিলো কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও’র নেতৃত্বে যৌথ টাস্কফোর্স। এ সময় টাস্কফোর্সের ওপর হামলা চালায় পাথরখেকো চক্রের সদস্যরা। এ সময় তাদের হামলায় পুলিশ, বিজিবি সহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা আহত হন। এ ঘটনার পর কোম্পানীগঞ্জের তৎকালীন এসিল্যান্ড থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। এ ছাড়া কলাবাড়ি ও বাজার রক্ষা করতে ১৪৪ ধারাও জারি করেন। ঘটনায় কালীবাড়ি গ্রামের আজিদ, আব্দুল হেকিম, মতিউর রহমান, গিয়াস উদ্দিন, রহিম মিয়া, গিয়াস মিয়া সহ ২৩ জনকে আসামি করা হয়। কলাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গ্রামের পাশ দিয়ে কলাবাড়ি থেকে দয়ারবাজার পর্যন্ত রাস্তা চলে গেছে। এই রাস্তার এখন আর অস্তিত্ব নেই।
বোমা মেশিন লাগিয়ে পাথরখেকো চক্রের সদস্যরা রাস্তার পাথরও লুটেপুটে খেয়েছে। একই সঙ্গে অবাধে পাথর উত্তোলনের ফলে লিলাইবাজারের কয়েকটি দোকান ভেঙে গেছে। তারা জানান, পাথর লুটপাটের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে পুরো কলাবাড়ি এলাকা। মসজিদও ভাঙনের মুখে পড়ছে। এসব বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যে কয়েক বার প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। কলাবাড়ি গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, গত ১০ দিন আগে পূর্বের পাথরখেকো চক্রের সদস্যরা ফের বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন শুরু করেছে। পর্যায়ক্রমে তারা ওই এলাকায় অর্ধশতাধিক বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করছে। দিনে ও রাতে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের ফলে এলাকায় শব্দ দূষণ দেখা দিয়েছে। বোমা মেশিনের তাণ্ডবের কারণে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে এলাকার মানুষের। এ ব্যাপারে সিলেট জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, পাথর উত্তোলন বর্তমানে বন্ধ। কেউ লোকালয় কিংবা অন্য এলাকায় পাথর উত্তোলন করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। লিলাইবাজারে পাথর উত্তোলনের কয়েকটি অভিযোগ তার কাছে এসেছে। এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তিনি থানায় পুুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও সুমন আচার্য মানবজমিনকে জানিয়েছেন, পাথর উত্তোলনে এখন আর কেউ বোমা মেশিন ব্যবহার করছে না। গোপনে কেউ করে থাকলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত অভিযান চালানো হবে। তিনি জানান, এলাকার সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী ইমরান আহমদ স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করা যাবে না। আর এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে আমরা কাজ করছি।
শারপিন টিলায় অভিযান:কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও সুমন আচার্য্যের নেতৃত্বে গতকালও সিলেটের আলোচিত শারপিন টিলায় অভিযান চালানো হয়েছে। যৌথ টাস্কফোর্সের সদস্যরা সকাল ১০টায় শারপিন টিলায় অভিযানে নামে। বিকাল ৩টা পর্যন্ত চলে টানা অভিযান। কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও জানিয়েছেন, অভিযানের সময় পানির বাঁধ ভেঙে ৯টি শ্যালো মেশিন ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরো ১৮টি শ্যালো মেশিন, ৪ হাজার ফুট পাইপ সহ ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার যন্ত্রণাংশ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ইউএনও জানান, কয়েক দিন আগে তারা উৎমা এলাকায়ও অভিযান চালান। সেখানেও তারা যান্ত্রিক মেশিন ধ্বংস করেছেন।
সূত্র- মানবজমিন