বিবর্তনবাদ শিক্ষা; কুরআন ও বিজ্ঞান বিরোধী এক মতবাদ
1 min read[আবু তালহা তোফায়েল]
বর্তমানে আমাদের দেশে, আমাদের সমাজে, আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থায় একটি সমালোচিত আলোচনা পাঠ্যপুস্তকে “বিবর্তনবাদ শিক্ষ”…..। বিবর্তন সম্পর্কিত চিন্তাভাবনার শিকড় রয়েছে অনাদিকালেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রজাতির পরিবর্তন ঘটে – এই ধারণার সূত্র পাওয়া যায় প্রাচীন গ্রিস, রোম, চীন এবং মধ্যযুগের ইসলামী বিজ্ঞানে। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিকে জীববিজ্ঞানে ট্যাক্সোনমি বা শ্রেণীবিন্যাসবিদ্যার উদ্ভবের পরে দুটি পরস্পরবিরোধী মতবাদ পাশ্চাত্ত্য জীববিজ্ঞান চিন্তাভাবনায় প্রভাব বিস্তার করেছিল। পরে ১৮৫৮ সালে চার্লস ডারউইন এবং আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস এক নতুন বিবর্তনের তত্ত্বের প্রস্তাবনা করেন, বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশিত হয় ডারউইনের অন দি অরিজিন অফ স্পিসিস (১৮৫৯) বইতে।
বিবর্তনবাদ মানে সাধারণত কোনো জীব অনেক অনেক পূর্বে অন্য জীব থেকে পরিবর্তন হয়ে আসছে। তাই তারা বলে যে, মানুষ জাতি ও পূর্বে মানুষ ছিলোনা। মূলত বানর থেকে পর্যায়ক্রমে ধীরে ধীরে মানুষের আকৃতিতে রুপধারণ করে। আমরা এ পর্যন্ত এই রুপে এসে পৌঁছি।
এই থিউরি কতটুকু নির্ভরযোগ্য? এই বক্তব্যকে কুরান মেনে নেয়? বিবেকের কাছে প্রশ্ন করলে কি উত্তর আসে, মানবতা কি বলে? আর প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞান কি সমর্থন করে?
প্রথমেই কুরানের ভাষায় বিশ্লেষণ করি;
পবিত্র কুরানের সূরা বাক্বারার ৬৫ নং আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে, (সংক্ষিপ্তভাবে নিম্নে উল্লেখ করছি) সমুদ্র উপকূলীয় এক জনপদের বাসিন্দা তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য সমুদ্র থেকে মৎস শিকার করতো। আল্লাহ তাদের জন্য নির্দেশ দিলেন তুমরা সপ্তাহের ৬ দিন মাছ শিকার করো আর একদিন (শনিবার দিনে) আল্লাহর ইবাদত করো এবং সেদিন তুমরা মাছ শিকার থেকে বিরত থাকো। যেদিন মাছ শিকার হতোনা, সেদিন সমুদ্রের মাছ প্রকাশ্যে ভেসে ভেসে খেলা করতো।
তারা কিছুদিন আল্লাহর হুকুম মানলে পরবর্তীতে তাদের একদল আল্লাহর নাফরমানি করতে শুরু করে; তারা সপ্তাহের শনিবার দিনে যখন মাছ খেলা করতো তখন তারা মাছগুলোকে আটকে রাখতো আর পরেরদিন ভোরে আটককৃত মাছ উপরে নিয়ে আসতো। এভাবেই তারা আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে। তাদের মধ্যে একদল (মুমিন) তাদেরকে বাধা দিলো।
তাদের মধ্যে তৃতীয় আরেক পক্ষ যারা মাছ শিকার করেনি কিন্তু মুমিনরা বাধা দিলে তারা মাছ শিকারকারীদের পক্ষপাতিত্ব করে। অবশেষে মাছ শিকারকারী ও তৃতীয়পক্ষের উপর আল্লাহ শাস্তি হিসেবে তাদের রুপকে মানুষের আকৃতি থেকে বানরের আকৃতিতে পরিবর্তন করে দেন। তাদের শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও বুদ্ধি ঠিক ছিলো, কিন্তু তারা কথা বলতে পারতোনা। তারা একে অপরের দিকে থাকায় আর কান্না করে, কিন্তু তাদের কষ্টের কথা বলতে পারেনা, সেই বাকশক্তিটুকু আল্লাহ কেড়ে নিয়েছিলেন।
অবশেষে তারা তিনদিন অতিবাহিত হবার পর সবাই মারা যায়। কেউই বেঁচে নেই বা তাদের উত্তরসূরী বলতে কেউ নেই।
এভাবে বুখারী ছানী (তাফসীরে) এসেছে “কু_নু ক্বিরাদাতান খা-সিয়িন”।
আল্লাহর নাফরমানি করায় আরেক জনগোষ্ঠীকে শুওরের রুপে রুপান্তরিত করে দেওয়া হয়েছে। তারাও তিনদিন বেঁচে ছিলো। তিনদিন পর সবাই মারা যায়।
বর্তমানের বানর আর শুওর তাদের বংশগতভাবে এভাবেই। মানুষ থেকে পরিবর্তিত বানর আর শুওর নয়।
তাই কুরান-হাদীসের কোনো যায়গায় উল্লেখ নেই যে, কোনো প্রাণী থেকে মানুষে রুপান্তরিত হয়েছে। কোনো প্রাণী আল্লাহর নৈকট্য লাভের কারণে সে মানুষ হয়েছে, এরকম কোনো বিবর্তনবাদ উল্লেখ নেই।
দ্বিতীয়ত বিবেক বিবেচনা করলে কখনো এমন হীনমানুষিকতাময় ধারণা বিবেকে নাড়া দেয়না। এমন বিবর্তনবাদ মানবতার উপর আঘাত হানে,
কারণ আল্লাহ মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, মানুষ রুপেই সৃষ্টি করেছেন, বানর থেকে পরিবর্তিত হলে মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হতে পারতনা। সব ধর্মেই বলে মানুষ হচ্ছে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি, সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুক, সর্বশ্রেষ্ঠ জীব।
সর্বশ্রেষ্ঠ কখনো নিকৃষ্ট জীব (বানর) থেকে রুপান্তরিত হয়না। কখনো বিবেক মানেনা, মানবতা বিরোধী এক অপব্যাখ্যা হচ্ছে “বানর থেকে মানুষ”। যার ভিতরে বিবেক-বুদ্ধি আর মানবতা এক চুল পরিমাণ নেই, সেই কেবল সেন্স হারা হয়ে বলে মানুষের আদি উৎস বানর।
তৃতীয়ত বিজ্ঞান কি বিবর্তনবাদ শিকার করে? বিবর্তনবাদ তত্ত্বটি চার্লস ডারউইনের জাস্ট একটা ধারণা বা মতবাদ!
বিজ্ঞানের বইগুলোতে মানুষের আদি উৎসের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিবর্তনবাদ তত্ত্ব উপস্থাপিত হয়েছে। বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন তার The Origin of Species বইয়ে প্রাণী জগতের উদ্ভব সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিবর্তনবাদ তত্ত্বের অবতারণা করেন। বিবর্তনবাদ মতে মানুষের উৎপত্তি হয়েছে বানর জাতীয় মানুষ (Australopithecines) থেকে পর্যায়ক্রমে মিলিয়ন বছরের ব্যবধানে।
ব্যাপারটা স্পষ্ট। বিবর্তন তত্ত্বটি বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন কর্তৃক প্রস্তাবিত একটা ধারণা বা মতবাদ। কিন্তু এই মতবাদটি ডারউইনের বইয়ে যখন প্রথম অবতারণা করা হয় এরপর থেকে গত ১৫০ বছর যাবৎ তত্ত্বটিকে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু ধারণাটি এখনও হাইপোথিসিস হিসেবেই রয়ে গেছে। বরং অনুসন্ধানের ফলে এর বিপরীতে যত প্রমাণ বের হয়ে এসেছে তা এর পক্ষে উপস্থাপিত প্রমাণের চেয়ে অনেক বেশি।
“বিংশ শতাব্দীতে এসে বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে বিবর্তন মতবাদটি ভুল প্রমাণিত হয়েছে এবং এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে প্রতিটি জীবকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। এরি ধারাবাহিকতায় মানুষকে ও সৃষ্টি করা হয়েছে এখন যে আকৃতিতে আপনি আমি, সেই আকৃতিতেই।
তাই “বিবর্তনবাদ শিক্ষা” কুরানের আলোকেও ভুল বিশ্লেষণ। বিবেক আর মানবতার কাছেও ভুল প্রমাণিত হলো। এবং বিজ্ঞানের আলোকেও প্রমাণিত হয়নি।
আমরা শিক্ষা গ্রহণ করবো সত্য জানা আর সত্যকে বুঝার জন্য। যদি এমন ভুল শিক্ষা গ্রহণ করি, তাহলে সারাজীবনে ভুলের উপর থেকে যাবো। তাই বর্তমানে ক্লাস 9-10 এর বিজ্ঞান বইয়ে বিবর্তনবাদ শিক্ষা নামে ভুল বিশ্লেষণ করতে চাইনা। পাঠ্যপুস্তক থেকে এমন অযৌক্তিক শিক্ষা “বিবর্তনবাদ” বাদ দেয়া হোক৷
.
লেখক:- আবু তালহা তোফায়েল
(প্রতিষ্ঠাতা, সহ-সম্পাদক ও প্রকাশক- “সীমান্তের আহ্বান”)